Football Respect

আমরা সবা্‌ই ফুটবল খেলায় মারামারি-হানাহানি দেখতে অভ্যস্ত। খেলো্য়াড়দের ম্যাচে জয় পাওয়ার জন্য আগ্রাসী ও হিংস্রাত্বক মনোভাবের দরুন একটি খেলায় মৌখিক স্লেজিং থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোনো খেলোয়ার অপর পক্ষের কোনো খেলোয়াড়কে খুব গুরুতর ফাউল করল। রেফারী বাঁশি দিল। এমতবস্থায় প্রায়শই আমরা দেখি আঘাতপ্রাপ্ত খেলোয়াড়টি তেড়ে মারতে আসে। আসলে এটি খেলার একটি অংশ।
এর বিপরীত দৃষ্টান্তও আছে। একে আমরা জানি Respect in Football নামে।
আসুন দেখি এমন কিছু ফুটবল রেসপেক্ট এর কথা যা ফুটবল খেলাটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে কাল থেকে কালান্তরে।





১০। কার্লোস পুয়েল বার্সেলোনায় খেলার সময় একবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার তার নাকে আঘাত করে এটা দেখে তার সতীর্থ রোনালদিনহো তেড়ে আসে ঐ ডিফেন্ডারের দিকে। কিন্তু পুয়েল সবাই দূরে সরিয়ে দেয় তাকে কিছু না বলার জন্য। Respect in Football এটি আছে লিস্টের ১০ নম্বরে।

০৯। মাঠে উল্টা পাল্টা অঙ্গি-ভঙ্গি করার কারনে খেলা শেষে ক্ষমা চেয়ে এক ফ্যানকে নিজের জার্সি দিয়ে রেসপেক্ট এর লিস্টে আগ্রাসী খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নামটি চলে আসে ০৯ নম্বরে।

০৮। এস.কে ব্রান অখ্যাত একজন প্লেয়ার। রেসপেক্টে তার নাম আসার কারন হলো তিনি দূর থেকে গোলবার লক্ষ্য করে বলে শট নেয় কিন্তু গোলকিপার অপ্রস্তুত থাকায় বলটি জালে জড়িয়ে যায়। অর্থাৎ গোল। মজার বিষয় হলো ব্রান সাহেব গোলটি দেয়ার পর গোল সিলিব্রেশন তো করেনই বরঞ্চ বিপক্ষ দলকে একটি ফ্রি গোল দেয়ার সুযোগ করে দেয়। (সত্যিই অদ্ভুত)

০৭। চ্যাম্পিয়ান লীগের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর বিজিত দলের গোলকিপার পরাজিত দলের গোলকিপারকে সান্তনা দিতে ছুটে আসে। ফুটবল বোদ্ধাদের তালিকায় এটিও উঠে আসে রেসপেক্ট এর লিস্টে। সান্তনা দিতে আসা গোলকিপার আর কেউ নন জার্মানীর বিখ্যাত অলিভার কান।

০৬। খেলা শেষে সবাই ড্রেসিং রুমে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। কিন্তু একজন খেলোয়াড় ড্রেসিং রুমের দিকে না গিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছেন। ব্যাপার কি? দেখা গেল শরীর থেকে জার্সি খুলে হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন একজন প্রতিবন্ধী শিশুর দিকে। প্রতিবন্ধী শিশুটি বসে আছে হুইল চেয়ারে আর তার দিকে এগিয়ে আসছে ব্রাজিলে ড্রিবলিং মাষ্টার রোনালদিনহো।

০৫। ডি-বক্সের মাঝখানে ফাউল। রেফারীর বাঁশি। অর্থাৎ পেনাল্টি। প্রতিপক্ষ যত বুঝাতে চেষ্টা করে এটা ফাউল হয়নি কিন্তু রেফারী তার সিদ্ধান্তে অনড়। যেই দল পেনাল্টি পেয়েছে তারাও অবশেষে বুঝতে পারে যে আসলেই এটা পেনাল্টি পাওয়ার মতো ফাউল হয় নি। কিন্তু কি করা যায়? পেনাল্টি তো নিতে হবে। অবশেষে ডাগ আউটের বাইরে কোচের সাথে আলোচনা করে পেনাল্টি নেয়া হয় তবে তা ইচ্ছে করেই গোলপোষ্টের বাইরে মেরে এই লিস্টে নিজেকে সামিল করে নেন ওয়ইগহোর্স্ট।

০৪। হঠাৎ ফুটবল মাঠে ঢুকে পড়ে এক সমর্থক। নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে আসে তাকে ধরার জন্য। খেলোয়াড়টিও দৌড়ে আসে সমর্থকটিকে নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত থেকে নিস্তার করার জন্য এবং নিজের জার্সি দিয়ে সমর্থকটিকে তার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে ভুল করেননি। বলছিলাম ইউক্রেনের আন্দ্রে শেভচেঙ্কুর কথা।

০৩। কর্নার কিক করা হলে স্ট্রাইকারের হাতে লেগে বলটি ঢুকে গেলো গোলপোষ্টের ভিতর। রেফারীর সেটা চোখে পড়ল না। অর্থাৎ গোল। কিন্তু না অতিমানবীয় প্লেয়ারটি অকপটে স্বীকার করলেন এটা আমার হাতে লেগেছে। অবশেষে রেফারী গোলটি বাতিল বলে ঘোষনা করলেন। জানতে চান প্লেয়ারটি কে? হ্যা ঠিক ধরেছেন তিনি মিরোস্লাভ কোল্জ। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলধারী।

০২। এ্যারন হান্ট একটি পেনাল্টি পেয়েও তা রিজেক্ট করে দেন। কেন তা জানতে ইচ্ছা করে? প্রতিপক্ষের একজন ডিফেন্ডার তাকে ডি-বক্সের মধ্যে লাথি মেরে ফেলে দেন। রেফারির সাথে সাথে পেনাল্টির বাঁশি। কিন্তু হান্ট দৌড়ে আসেন রেফারীর কাছে আমাকে কেউ ফাউল করে নি আমি নিজেই পায়ের সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে যাই।

০১। গোলের উদ্দেশ্যে গোলবারে সজোরে শট। গোলকিপারও ছিল তৎপর, ক্ষিপ্রগতিতে বলটি মুঠোবন্দি করতে দেরী করেননি। কিন্তু বলটি হাতে ধরতে ধরতে তার পা একজন খেলোয়ারের বুকের ভিতর সজোরে আঘাত করে। আঘাতপ্রাপ্ত খেলোয়াড়টি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অবস্থা এতটাই সচনীয় হয় যে বিপক্ষ দলের একজন খেলোয়ার তার কাছেই ছিল তিনি সাথে সাথে তার মুখটি হাঁ করে ধরেন যাতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারেন। এই ঘটনার পর ডাক্তার বলেছিল ঐ সময় যদি তিনি তার মুখটি না ধরত তাহলে হয়তো তাকে আর বাচাঁনো সম্ভব হতো না।
হতভাগা সেই খেলোয়ারটি নাম জানেন? তিনি হচ্ছেন ইউক্রেনের ওলে হোসেফ আর দরদী সেই প্লেয়ারটি হচ্ছে জাবা কানকাভা একজন জর্জিয়ান মিডফিল্ডার।
গুগল-ইউটিউব যেখানেই আপনি Jaba Kankava লিখে সার্চ দিন না কেন সবার আগেই তার এই বীরত্বপূর্ণ তথ্য আপনার সামনে হাজির হবে। 


খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ভিডিওগুলো?
এই নিন লিংক- https://www.youtube.com/watch?v=kZ7jPZsT4NY

No comments

Powered by Blogger.